শিশুদের রমাদান পরিকল্পনা
আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও মহিমান্বিত হলো পবিত্র রমজান মাস। এ মাসের মাধ্যমে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করে থাকি। গরিব-অভুক্তদের কষ্ট বুঝতে পারি, তৈরি হয় পারস্পরিক সম্প্রীতি, দয়া, ভালোবাসা। ছোট বড়ো সবাই আনন্দের সাথে পুরো মাসটিতে নানা ইবাদাত, বন্দেগী ও ভালো কাজ করে থাকে। মহান স্রষ্টার অবারিত রহমত বরকতে পূর্ণ থাকে।
করোনা ভাইরাসের এ মহামারিতে বর্তমানে আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সবই বন্ধ। এবারের রোজা কিন্তু অন্য যেকোন বছরের থেকে ভিন্নভাবে কাটাতে হবে।
এবারের রোজায় তুমি অনেক কিছুই অর্জন করতে পারো। তার জন্য চাই- একটি সুন্দর পরিকল্পনা। কথায় আছে- ব্যর্থ মানুষের হলো দুই ধরনের, এক- যারা কাজের পরিকল্পনা করেছে কিন্তু কাজ করেনি, আরেক ধরনের হল- যারা কাজ করেছে কিন্তু পরিকল্পনা করেনি।
বুঝতেই পারছো, কাজ করার আগেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। চলো এবার আমরা রমজান মাসের পরিকল্পনা করে নেই।
১. রোজা রাখা :
আমাদের প্রিয় নবী (সা) কিন্তু ৭ বছর বয়স হলেই ফরজ ইবাদত করার চেষ্টা করতে, আর ১০ বছর বয়স থেকে পুরোপুরি পালন করতে বলেছেন। নতুবা এর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
তোমার বয়স দশ পার হয়ে গেলে কিন্তু সবগুলো রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। অবশ্য কোনো অসুস্থতা বা বিশেষ কারণ থাকলে ভিন্ন কথা। আর যদি আরো ছোট হও তাহলে প্লান নিয়ে নাও কতটি রোজা রাখবে। এবছর কি তোমার প্রথম রোজা হবে?
গত বছর কয়টি রোজা রেখেছিলে?
এবছর কতটি রোজা রাখবে?
তোমার সাথে বন্ধু, ছোট ভাই বোনদের উৎসাহ দিতে পারো। আর যদি রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে সাহরি ও ইফতারে শামিল হবে।
২. নামাজ পড়া :
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পরিকল্পনা করে নাও। খেয়াল রাখতে হবে- মাঝেমধ্যে অলসতা বা ঘুমের কারণে যেন ছুটে না যায়। এবার তো আর মসজিদে যাওয়া যাচ্ছে না তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়তে পারো। নামাজ পড়লে দেখবে তোমার শরীর ভালো থাকবে পাশাপাশি মনও চাঙ্গা থাকবে। একজন মুসলমানকে তো নামাজের মাধ্যমেই চেনা যায়।
৩. তারাবীহ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া :
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ নামাজ হচ্ছে তারাবীহ নামাজ।বাসায় আব্বু-আম্মুর সাথে পড়তে পারো। আর সাহরি খাওয়ার আগে তো উঠতেই হয়। তারও কিছুক্ষণ আগে উঠে নামাজ পড়ে নিতে পারো। আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার জন্য এ নামাজ কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়।
৪.কোরআন হাদিস পড়া :
তুমি কোরআন পড়তে না পারলেএ মাসেই উত্তম সুযোগ কোরআন শিখে নেয়ার। নিয়মিত কোরআন পড়া, অর্থসহ বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে পারো। কিছু ছোট ছোট সূরা মুখস্ত করতে পারো। প্রতিদিন ২-৩ টি করে হাদিস পড়তে পারো। বাসায় বই না থাকলেও মোবাইল এর মাধ্যমেও পড়তে পারবে।
৫. ইসলামিক বই পড়া :
মহানবী (সঃ) ইসলামের জীবনী, চার খলিফা ও সাহাবীদের জীবনী পড়তে পারো। ভালো ভালো ভিডিও লেকচার শুনতে পারো। এখন সুন্দর ইসলামিক কার্টুন পাওয়া যায় সেগুলোও দেখতে পারো। তাহলে বুঝতে পারবে ইসলাম কত সুন্দর উদার একটি ধর্ম।
৬. ক্লাসের বই পড়া :
অনেকদিন হলো স্কুল বন্ধ। ক্লাসের পড়ায় কিন্তু অমনোযোগী হলে চলবে না। একটি চমৎকার রুটিন সাজিয়ে নিতে পারো ক্লাসের বই পড়ার জন্য। আব্বু আম্মুর সহযোগিতা নিবে। অনলাইনেও ক্লাসগুলো বুঝে নিতে পারো। তাহলে তুমি স্কুলেও এগিয়ে থাকতে পারবে।
৭. ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা :
তুমি কি সামান্য কিছুতেই রেগে যাও?
মিথ্যা কথা মাঝেমধ্যে বলো?
বিছানা টেবিল কাপড় গোছানো হয় না?
তাহলে এখনই সময় নিজকে শুধরে নেবার। তোমার ভাল এবং মন্দ কাজ গুলোর একটা লিস্ট করে নাও। এবার পরিকল্পনা নিয়ে নাও। খারাপ কাজগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখার এবং ভালো কাজ আরও বেশি করার।
৮. বাসার কাজে সাহায্য করা :
বাসায় থেকে আম্মুকে সাহায্য করতে পারো। যেমন- ঘর গুছিয়ে রাখা, খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখা, ঘর ধোয়া মুছার ক্ষেত্রে সাহায্য করা, বাগানে ফুলের টবে পানি দেয়া প্রভৃতি।
প্রিয় বন্ধুরা, রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় নিজেকে সুন্দর ও পরিশুদ্ধ করার। একজন ভালো মানুষ হবার।
অসহায় মানুষদের পাশে দাড়াতে হবে। সবসময় পরিস্কার থাকার চেষ্টা করবে। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করো যাতে করোনা মহামারী থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন।
– এম এ কে শাহিন চৌধুরী (বিশিষ্ট শিশু সংগঠক)