শিশুদের ওমিক্রন ঝুঁকি কীভাবে মোকাবেলা করবেন
করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে, এবং সংক্রমণের ঝুঁকি আগের চেয়ে কম নয়। নিজেরা টিকা নিয়েছেন কিংবা নেননি এমন অনেক পিতা-মাতা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, বিশেষ করে যাদের সন্তানকে টিকা দেওয়ার বয়স হয়নি।
গত ২২ ডিসেম্বর ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে শিশুদের ওমিক্রন ঝুঁকি মোকাবেলা নিয়ে একটি প্রবন্ধ। সেখানে সাংবাদিক আনা ওয়াটসের মুখোমুখি হয়েছেন দুজন বিশেষজ্ঞ। সে আলোচনাটি এখানে বাংলাভাষীদের উপযোগী করে অনুবাদ করা হলো।
আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা হলেন:
জেনিফার নুজো
জেনিফার নুজো: যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের একজন এপিডেমিওলজিস্ট বা মহামারী বিশেষজ্ঞ, তিনি সংক্রামক রোগের উপর গবেষণা করেন। নুজো ৫ এবং ৮ বছর বয়সী দুই সন্তানের মা, তারা পাবলিক স্কুলে পড়ছে এবং সম্পূর্ণ টিকা নিয়েছে।
পিটার হোটেজ
ড. পিটার হোটেজ: একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেলর কলেজ অব মেডিসিনের বিজ্ঞানী। তিনি ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছেন, এর মধ্যে রয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ‘কোরভিভ্যাক্স’ নামে একটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।
টিকা দেওয়ার জন্য আমার সন্তান বয়সে খুব ছোট। ওমিক্রনের ঝুঁকি নিয়ে আমার কীভাবে চিন্তা করা উচিত?
জেনিফার নুজো: এ পরিস্থিতিতে অনেক মা-বাবাকে আমি চিনি যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে খুব চিন্তিত। তাদের মনের অবস্থাটা আমি বুঝি। মহামারী ছাড়াও ছোট ছোট বাচ্চাদের মা-বাবা হওয়া যথেষ্ট দুশ্চিন্তার ব্যাপার।
আমি সাধারণত দুটি উপায়ে কোভিড-১৯ ঝুঁকি নিয়ে ভাবতে সবাইকে বলি: সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি। যে কোন কমিউনিটিতে উচ্চ মাত্রার সংক্রমণ সব বয়সেই ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ওমিক্রন বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তার মধ্যেই সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ে।
কিন্তু শিশুদের টিকা দেওয়াই তাদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় নয়। সাধারণত, আমরা দেখেছি যে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করে টিকাবিহীন শিশুদের সুরক্ষা বাড়াতে পারি। টিকা না দিতে পারলেও খুব কম বয়সী শিশুদের রক্ষা করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
আপনি ঘরের ভেতরে বা বাইরে ভিড় ও অন্যান্য সমাবেশ এড়িয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বা দ্রুত পরীক্ষা করে এবং আপনার ছোট সন্তানদের চারপাশে প্রাপ্তবয়স্কদের মাস্ক পরিয়ে দিয়ে আপনার সন্তানের ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কমাতে পারেন।
অল্পবয়সী শিশুদের রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে, সৌভাগ্যবশত, আমাদের কাছে থাকা সব ডেইটা থেকে জানা যায় যে তারা সংক্রমিত হলে তাদের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোরদের তুলনায় অনেক কম। নতুন তথ্য এটাও দেখায় যে শিশুদের মধ্যে দীর্ঘ কোভিডের ঝুঁকিও কম। আমার ১২ মাসের কম বয়সী শিশু থাকলে আমি আরও সতর্ক থাকবো, কারণ অন্যান্য শিশুর তুলনায় তাদের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত, কোলের ওপর অল্প বয়সী শিশুদের ঢেকে রাখা সহজ, কারণ ওই বয়সে তারা অনেকেই নিজেরা হাঁটাচলা করতে পারে না। তবে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে শিশুদের আরও বেশি ঝুঁকি থাকতে পারে, নির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্য মা-বাবার উচিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা।
আমরা এখনও ওমিক্রনের প্রাথমিক অবস্থার মধ্যে আছি, শিশুদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা বেড়েছে এমন উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো এখনও কোন ডেইটা আমরা পাইনি। তুলনামূলক কম এ ঝুঁকি এবং সেগুলো আরও কমিয়ে আনতে আমাদের সক্ষমতা আগামী কয়েক মাসে কিছু উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পিটার হোটেজ: আমি একমত। আমি আরও যোগ করব যে- দক্ষিণ আফ্রিকায়, আমরা দেখেছি যে ছোট শিশুরা ওমিক্রন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। যাই হোক, এ শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে, কিন্তু কোভিড-১৯-এর জন্য নয়। মনে হতে পারে যে ওমিক্রন বেছে বেছে শিশুদের টার্গেট করছে, যেহেতু ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট খুব সংক্রামক, তাই এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে আগুনের ঝড়ের মধ্যে ভেসে যেতে পারে। গ্রীষ্মে টেক্সাসে ডেল্টা ভেরিয়েন্টে শিশুদের সঙ্গে এমনই কিছু ঘটেছে।
নতুন করোনাভাইরাসের কারণে শিশু-শ্রেণিতে পড়া আমার সন্তানের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য ক্লাসে পড়া শিশুরা কি সত্যি নিরাপদ?
জেনিফার নুজো: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন, ‘নিরাপদ’ কিংবা ‘অপেক্ষাকৃত নিরাপদ’ ব্যাপারগুলোর চেয়ে। সাধারণভাবে, স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশলে স্কুলগুলো সমাজের অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ৷
মহামারীজুড়ে শিশুদের মধ্যে গুরুতর রোগের ঝুঁকি কম ছিল। এখন স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের গুরুতর রোগের ঝুঁকি আরও কমাতে টিকা নিতে পারে। এখানে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, স্কুলে মহামারী ছড়িয়ে পড়লে তার উৎস কী হতে পারে? কোন শ্রেণিকক্ষে সংক্রমণ ছড়ালে তা স্কুলের ভেতরের কোন কার্যক্রমের ফলে না-ও হতে পারে, বরং সহপাঠীরা আগে অংশগ্রহণ করেছে এমন কোন সামাজিক বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপের ফলে হতে পারে।
সাধারণত, স্কুলের পাঠ্যক্রম কার্যকলাপে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। এ ঝুঁকি কমানো যেতে পারে যদি স্কুলগুলো ‘টেস্ট-টু-স্টে’ (টিটিএস) কৌশল মেনে চলে। টিটিএস হলো- যখন কোন স্কুলে একটি কোভিড-১৯ কেস শনাক্ত হয়, তখন সেই শিক্ষার্থী বা শিক্ষক বা কর্মচারীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে রাখার পরিবর্তে নিয়মিত র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়, এতে স্কুলে শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস সচল থাকে যা মহামারী চলাকালীন অনলাইন ক্লাস বা রিমোট স্কুলিং-এ অভ্যস্ত অভিভাবকদের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক। যদি ভাইরাসের উপসর্গ না থাকে এবং সাতদিনের মধ্যে অন্তত দুবার কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে তবে তারা ব্যক্তিগতভাবে শেখা চালিয়ে যেতে পারে, যদি পজিটিভ আসে তবে তাদের অবশ্যই আইসোলেশনে নেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) সম্প্রতি এ ‘টেস্ট-টু-স্টে’ (টিটিএস) নীতি অনুমোদন করেছে।
পিটার হোটেজ: করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ঢেউ থেকে রক্ষা পেতে খুব বেশি আশার আলো নেই, অবশ্য এটি এমন সময় বেড়েছে যখন শিশুরা শীতের ছুটি বা বাড়িতে ছিলো। সংক্রমণ যদি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে যায় তাহলে হয়তো কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে স্ক্লাস চালু রাখা সম্ভব হবে না। জানুয়ারিতে এসেও সীমিত পরিসরে ক্লাস চলছে, যদিও আমরা ইতোমধ্যে এ নতুন ঢেউয়ের নিচের দিকে রয়েছি এবং স্কুলগুলো এখনই বন্ধ না করে অতিরিক্ত এক বা দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু যে কোন নতুন ভেরিয়েন্টের মতো, কিছু না জানা পর্যন্ত আমরা সত্যিই কিছু বলতে পারব না।
ঘরের বাইরে গেলে ওমিক্রন কি ডেল্টার চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ? শিশুদের কি খেলার মাঠেও মাস্ক পড়া উচিত?
জেনিফার নুজো: আমি নির্দিষ্ট ডেইটা দেখিনি যে ঘরের বাইরে গেলে ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। আমাদের যে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে স্বাস্থের অবস্থা কতটা সুরক্ষা যোগ করবে আর এটি যে পরিমাণ ব্যাঘাত ঘটাবে তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। মাস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো বাড়ির ভেতরে। কিছু শিশু খেলার মাঠে মাস্ক পরে পুরোপুরি খুশি, বিশেষ করে যদি এটি খুব গরম না হয়। কিন্তু অন্যান্য শিশুরা ওই সময়ে মাস্ক না পরে স্বস্তি পাচ্ছে।
আমার সন্তানদের স্কুল বাইরে ছুটির সময় তাদের মাস্ক পরতে বাধ্য করে না, শিশুরা সারাদিন স্কুলে মাস্ক পরা থেকে বিরতি পেয়ে খুব আনন্দিত। আমি এটা সমর্থন করি। ঘরের বাইরে গেলেই আমরা সাধারণত মাস্ক পরি না, তবে ভিড়ের মধ্যে থাকলে আমরা সেগুলো ব্যবহার করি।
থিয়েটার বা মঞ্চ-নাটকের মতো ইনডোর মাস্কড ইভেন্টে কি আমরা শিশুদের নিয়ে যেতে পারি? জাদুঘরের মতো জায়গাগুলোতে যেতেই বা কেমন প্রস্তুতি দরকার?
জেনিফার নুজো: এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার সন্তানদের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি এবং ঝুঁকি সহনশীলতার উপর। আমার সন্তানদের দুটো টিকাই দেওয়া হয়েছে, তাই আমি তাদের জাদুঘরে নিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যদি তাদের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে, আমি ভ্যাকসিন থেকে তাদের সুরক্ষার স্তর বা তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তবে আমি সম্ভবত অনেক বেশি ভিড় হয় এমন ইনডোর স্পেস এড়াতে চেষ্টা করব।
আমার সন্তানরা টিকা নেওয়ার আগে, আমরা তাদের কোথায় নিয়ে যাবো সে সম্পর্কে আরও চিন্তা-ভাবনা করতাম। সামাজিক বা উন্নত সুবিধা আছে এমন জায়গায় যেতে অগ্রাধিকার দিতাম। আমি যখন তাদের বিজ্ঞান যাদুঘরে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, গ্রীষ্মে যেতেই পছন্দ করেছিলাম, তখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কম ছিল।
টিকা দেওয়া বা টিকা না দেওয়া শিশুদের খেলাধুলার সময় কীভাবে বের করা উচিত?
জেনিফার নুজো: সবচেয়ে নিরাপদ খেলাধুলার সময় হলো অন্যান্য টিকা দেওয়া শিশুদের সঙ্গে যাদের সঙ্গে আপনার সন্তানরা ইতোমধ্যে নিয়মিত সংস্পর্শে আছে, যেমন সহপাঠীরা। আমার সন্তানদের টিকা দেওয়ার আগে, আমি ঘরের বাইরে খেলার সময় বের করতাম। তবে আমরা এখনও ইনডোর খেলার মাঠ বা শিশুদের খেলাধুলার বাণিজ্যিক স্পেসগুলোতে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করিনি। তবে আমি মনে হয় এখন এটি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো, কারণ আমাদের পুরো পরিবার টিকা নিয়েছে। শিশুদের বেড়ে ওঠা ও বিকাশের জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অনেক।
পিটার হোটেজ: গ্রামাঞ্চল বা উপ-শহরগুলোতে শিশুদের ঘরের বাইরে খেলার জন্য চমৎকার জায়গা আছে। বড় শহরে বা ফ্ল্যাট-বাড়িতে যদি শিশুরা বাসার ভেতরে থাকে, সতেজ নিশ্বাসের জন্য বায়ুচলাচল বাড়াতে পেছনের দরজা বা জানালা বাইরের দিকে খোলা রাখা দরকার। অন্যথায়, আমি জেনিফারের সঙ্গে একমত।
আমার সন্তানদের টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমরা রোগ-সংক্রমণ থেকে নিরাপদ এমন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি ছোট ছুটি উদযাপন করার পরিকল্পনা করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত কি পুনর্বিবেচনা করা উচিত?
জেনিফার নুজো: প্রত্যেকের যদি টিকা নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তুলনামূলক নিরাপদে সামাজিক অনুষ্ঠান বা ছুটি উদযাপন করা সম্ভব। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ও মাস্কের ব্যবহার সুরক্ষার স্তর বাড়াবে। শেষ পর্যন্ত, সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত পরিবারের ওই সদস্যদের যারা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে তারা যে কোন পরিবারিক সমাবেশের জন্য যে কোন স্তরের অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক।
পিটার হোটেজ: আমি মনে করি এটা বয়সের উপর ভিত্তি করে ঝুঁকির স্তরের উপর নির্ভর করে বা ব্যক্তি কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখেন তার ওপর। আপনার পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল লোকেরা কখন তাদের বুস্টার পেয়েছে তার উপরও এটি নির্ভর করে, যেহেতু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখায় যে বুস্টারের কয়েক মাস পরই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা স্তর কমে যেতে পারে।
আমাদের বড় পরিবার, বাসা বা বাড়ির ভেতরেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। তখন আমরা কী করবো?
পিটার হোটেজ: যত বেশি লোক সাধারণত ঝুঁকি তত বেশি। ওমিক্রন ঢেউয়ের সময় আমি এটা নিরুৎসাহিত করব। আমি সুপারিশ করবো যে প্রত্যেকে সম্পূর্ণ টিকা নিন, বুস্টার ডোজ নিন এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রাখুন। মাস্ক ব্যবহার করুন এবং যথাসম্ভব দরজা-জানালা খুলে ঘরের বায়ুচলাচল বাড়ান।
আমার পরিবারে খুব অল্প বয়সী শিশু আছে, আমরা ইতোমধ্যে যে সতর্কতা পালন করছি তাতে বড় কোন পরিবর্তন আনার কথা ভাবছি না। সন্তানদের মাস্ক পরিয়ে স্কুলে পাঠাই, মাস্ক পরে বাইরে যাই। কারও উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করি। আমরা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছি, যেখানে ৭০-এর বেশি বয়সী দুই দাদা-দাদী রয়েছেন। আমরা কি ভুল করছি?
জেনিফার নুজো: আমি জানি কিছু মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মৌলিকভাবে তাদের আচরণ পরিবর্তন করছে, কারণ তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংক্রমণ বা চাপ বাড়াতে চায় না। আমি এ প্রচেষ্টার সমর্থন ও প্রশংসা করি। কিন্তু একজন অভিভাবক হিসেবে, প্রায় দুই বছর আমাদের সন্তানদের বাড়িতে, স্কুলের বাইরে, ছুটির সময় আত্মীয়দের থেকে দূরে রাখা আমার কাছে সত্যি কঠিন মনে হয়।
তাই আমি মনে করি আরও বাস্তবসম্মত উত্তর খোঁজা উচিত যে আপনার কী করা উচিত, এটা নির্ভর করে আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা, আপনার চলাচল ও কাজ নিরাপদ রাখতে আপনার সক্ষমতা এবং আপনি যদি সংক্রমিত হন তবে তা নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতার উপর। আপনি যা বর্ণনা করেছেন তা হলো আমাদের সন্তানদের টিকা দেওয়ার আগে আমাদের পরিবার কীভাবে বসবাস করত সেটা। আমরা এমন জায়গায় যেতে এবং এমন কিছু করতে চাইতাম যা পরিবার হিসেবে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের জন্য এর অর্থ পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা এবং স্কুলে যাওয়া।
আমরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করি সে প্রক্রিয়া ওমিক্রন পরিবর্তন করে না। কিন্তু কমিউনিটিতে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমরা যে ব্যবস্থা নিই তা কিন্তু একই থাকে।
আমি এখনও মনে করি গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে যাওয়া, তাদের সঙ্গে মেশা সম্ভব, বিশেষ করে যদি সবাইকে টিকা দেওয়া যায়। সচরাচর দেখা হয় না এমন লোকেদের সঙ্গে দেখা হওয়ার ঠিক আগে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা যেতে পারে। ভাল বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা এবং সঠিক উপায়ে মাস্কের ব্যবহার এ সমাবেশগুলো আরও নিরাপদ করে তুলতে পারে। এমনকি ঝুঁকি কম হলেও, লোকেদের এ সত্যের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত যে তারা সংক্রমিত হতে পারে এবং যদি তারা তা করে তবে তাদের আইসোলেশনে যেতে হবে।
পিটার হোটেজ: প্রত্যেকেই টিকা নেওয়া উচিত। যারা বুস্টার ডোজের যোগ্য তারা তা পাওয়া উচিত। পুনরায় ওমিক্রন সংক্রমণের উচ্চ হারের কারণে যারা আগে সংক্রমিত হয়েছিল তাদেরও টিকা নেওয়া দরকার। ৫ বছর বা তার বেশি বয়সী সব শিশুকে টিকা দেওয়া উচিত।