শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সিসিমপুর

সবাই নিজস্ব চাহিদা থেকে পছন্দের লেখক, বিষয় ও প্রকাশনা সংস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে বই কেনেন। নিবারণ করার চেষ্টা করেন জানার ও পড়ার তেষ্টা। শিশুদের মাঝেও দেখা যায় এই প্রবণতা। তারাও নিজেদের মতো করে পছন্দের জগৎ তৈরি করে নেয় বইমেলায়। তাদের অনেকেই কমিক্স, রূপকথা, সায়েন্স ফিকশন অথবা জাফর ইকবালে বুঁদ। কিন্তু প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘সিসিমপুর’।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিনে চিত্র ছিল এমন। মেলা ঘুরে দেখা যায়, শিশু চত্বরে সিসিমপুরের স্টলকে ঘিরে উপচে পড়া ভিড়। বাবা-মা বা অভিভাবকদের হাত ধরে বইমেলায় ঘুরতে আসা শিশুরা নিজেরা দেখে পছন্দ করে নিচ্ছে বই।

স্টল-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই সিসিমপুরের স্টলে শিশু-কিশোরদের ভিড় থাকে। তবে ছুটির দিনে তা পরিণত হয় উপচে পড়া অবস্থায়।

সিসিমপুরের স্টল ইনচার্জ মৌসুমী আক্তার বলেন, বইমেলার প্রতিদিনই শিশু চত্বরের স্টলগুলোর মধ্যে সিসিমপুরে ভিড় বেশি থাকে। তবে শুক্র-শনিবার ভিড় একটু বেশি থাকে। আজ ও গতকালের মতো শিশু চত্বরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

স্টলের বিক্রয়কর্মী সানোয়ার হোসেন বলেন, মেলায় শিশু চত্বরে সব স্টলের মধ্যে আকর্ষণের মূলে আছে সিসিমপুর। যে কারণে শিশুরা মেলায় এলেই এখানে চলে আসে। অভিভাবকদের হাত ধরে তার বই দেখে, পছন্দ করে এবং কেনে।  আমরাও তাদের চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করি।

অভিভাবকরা জানান, টিভিতে শিশুতোষ ধারাবাহিক ‘১২৩ সিসিমপুর’ দেখে শিশুরা চরিত্রগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছে। আর সিসিমপুরের প্রকাশনীর বইগুলোও সেসব চরিত্র দিয়ে লেখা ও চিত্রায়িত করা হয়। যে কারণে তারা মেলায় এলে এখানকার বই কেনার বায়না ধরে। আর শিশুদের পাঠ্যাভ্যাস তৈরি করতে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই তুলে দিতে কোনও সংশয় নেই তাদের বলে জানান।

মিরপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে মেলায় আসা রাহেলা আক্তার বলেন, বাচ্চারা টিভিতে সিসিমপুর সিরিজ দেখে। এ কারণে তারা মেলায় সিসিমপুরের বই কিনতে চায়। তা ছাড়া বইগুলোও সিসিমপুরের চরিত্র আলোকে চিত্রায়িত করা ও লেখা।

আজিমপুর থেকে বাবার সঙ্গে মেলায় ঘুরতে আসা সানজিদা তাবাসসুম বলে, আমি সিসিমপুর নিয়মিত দেখি। আমার সিসিমপুরের সিকু, টুকটুকি, ইকরি, হালুম, ইকরিকে আমার ভালো লাগে। তাই আজ আব্বুর সঙ্গে এসে তিনটি বই কিনেছি সিসিমপুর থেকে।

নতুন বই
১১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৯১টি। এর মধ্যে গল্প ২১, উপন্যাস ৩২, প্রবন্ধ ৯, কবিতা ৫১, গবেষণা ৩, ছড়া ৬, শিশুসাহিত্য ৯, জীবনী ৪, রচনাবলি ২, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ১, বিজ্ঞান ৫, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৬, রাজনীতি ২, চিকিৎসা ৪, বঙ্গবন্ধু ৩, রম্য ২, ধর্মীয় ১, সায়েন্স ফিকশন ৬ ও অন্যান্য ২০টি।

বিকাল ৪টা বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আশরাফ সিদ্দিকী ও সাঈদ আহমদ স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান। এ সময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিদানী। আলোচনায় অংশ নেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস আল দীন, রীপা রায় ও আদুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুরশীদা বেগম।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন প্রতিযশা লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক ও বিশ্লেষক। তিনি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ফোকলোর চর্চায় ভিন্নতার অনুসন্ধান করেছেন। ফোকলোরের নানা অনুষঙ্গ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে সাঈদ আহমদ ছিলেন বাঙালি হয়েও একজন বিশ্বমানব। বাংলা ও ভারতীয় সংস্কৃতি তো বটেই, বিশ্বের প্রতিটি দেশের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তার সব থেকে বড় অবদান, তিনি বিদেশি সাহিত্য আঙ্গিককে দেশে এনেছিলেন এবং দেশের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে যারা ফোকলোর চর্চায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন, আশরাফ সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজন। ফোকলোর গবেষণার কিংবদন্তি, লোককাহিনি ও উৎসব-আচার সম্পর্কে তার বিস্তর আগ্রহ ছিল। তিনি শুধু লোকসংস্কৃতির গবেষকই ছিলেন না, বাংলা সাহিত্যের জীবনঘনিষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদও ছিলেন।

অন্যদিকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাঈদ আহমদ এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অনন্য নাম। চাকরির সুবাদে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বসংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।

সভাপতির বক্তব্যে খুরশীদা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের দুজন ড. আশরাফ সিদ্দিকী ও সাঈদ আহমদ। তাদের জীবন, কর্ম ও আদর্শ আমাদের তরুণ সমাজকে পথ দেখাবে। এই গুণী ব্যক্তিদের স্মরণ করা আমাদের একান্ত জরুরি।

লেখক বলছি
অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মুর্শিদা বিনতে রহমান, রমজান মাহমুদ, ইশরাত তানিয়া ও কবির কল্লোল।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, বিশপ হুদা, শেলী সেলিনা, আমানউল্লাহ ও অরিনা আখতার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, মো. মাসকুরে সাত্তার, বেলায়েত হোসেন ও সায়েরা হাবীব। এ ছাড়া ছিল জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠন এবং অমিত হিমেলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমন্বর’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন রওশন আলম, অনাবিল ইহসান, মামুনুল হক সিদ্দীক, জুলি শারমিনী, ফারহানা আক্তার, মো. রবিউল হক, আরতি রাণী সেন ও প্রায় চক্রবর্তী।

১২তম দিনের সময়সূচি
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ১২তম দিনে বিকাল ৩টায় মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

আলোচনা অনুষ্ঠান বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে হাসান হাফিজুর রহমান ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মিনার মনসুর ও শেখ মো. কাবেদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেবেন শোয়াইব জিবরান, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, করেন আনস্থার ও ওবায়েদ আকাশ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এ এইচ এম লোকমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *