শিক্ষার আলোয় ফিরেছে ঝরে পড়া ১০৫০ শিশু

বাগেরহাটের মোংলায় ঝরে পড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যতিক্রমী শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রগ্রাম’-এর প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচির আওতায় ‘শিখন কেন্দ্র’ নামে ৩৫টি স্কুল খোলা হয়েছে এখানে। পৌরসভায় ১১টি ও উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ২৪টি মোট ৩৫টি শিখন কেন্দ্র চালু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নীড় সেবা সংস্থা’। এসব শিখন কেন্দ্রে এলাকার ঝরে পড়া শিক্ষাবঞ্চিত থাকা মোট এক হাজার ৫০ জন শিশু শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনা করছে।

আজ সোমবার (২৪ জুলাই) মোংলা পোর্ট পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিখন কেন্দ্রগুলো ঘুরে জানা গেছে, এলাকার ঝরে পড়া খুদে শিক্ষার্থীরা শিখন কেন্দ্রগুলোতে বেশ মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করছে। শিখন কেন্দ্রে আসা শিক্ষার্থীদের দিতে হয় না কোনো টাকা।

এ সময় কথা হয় উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের শিখন কেন্দ্রের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রত্না মন্ডলের সাথে। রত্না জানায়, তার বাবা অপূর্ব মন্ডল পেশায় একজন জেলে।

অভাবের কারণে তার বাবা ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়িয়েছিলেন তাকে। এর পর থেকে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। পরে নীড় সেবা সংস্থার গড়া শিখন শিক্ষা কেন্দ্রে ফ্রিতে ভর্তি হয়। বেতনও দিতে হয় না।

রবং পড়াশোনার সকল শিক্ষাসামগ্রী বিনা মূল্যে পাচ্ছে সে।

চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলম ঢালীর মেয়ে খাদিজা আক্তার। সেও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। অভাব আর সংসারের টানাপড়েনে শিক্ষার আলো থেকে সেও ঝরে পড়েছিল। পরে নীড় সেবা সংস্থা তাকে টেনে নিয়ে শিখন কেন্দ্রে শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে।

সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রগ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচির আওতায় নীড় সেবা সংস্থা নামে উন্নয়ন সংস্থাটি মোংলা উপজেলায় ৩৫টি শিখন কেন্দ্র খুলেছে। এর মধ্যে পৌরসভায় ১১, উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নে ১১, চিলা ইউনিয়নে সাত ও সুন্দরবন ইউনিয়নে ছয়টি শিখন কেন্দ্র চালু রয়েছে।

নীড় সেবা সংস্থার মোংলা উপজেলার প্রগ্রাম ম্যানেজার লিপি ধুনী বলেন, নানা কারণে মোংলা উপজেলায় অনেক শিশু শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ে। এসব শিক্ষার্থীকে মূলধারায় নিয়ে আসতে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছেন তারা। ২২ সালের ডিসেম্বর থেকে এসব ঝরে পড়া শিশুদের জন্য ৩৫টি শিক্ষাকেন্দ্র খুলে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এখন এক হাজার ৫০ জন। তাদের বিনা মূল্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সার্বিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি পড়াশোনা করানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা, জীবনের মানোন্নয়ন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত ও আত্মকর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

মোংলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়বহির্ভূত ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে আসায় নীড় সেবা সংস্থা নিঃসন্দেহে একটি প্রশাংসামূলক কাজ করে চলছে। তাদের এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা শতভাগ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *