মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই শিশু সুরাইয়া ফের সিআরপিতে ভর্তি
মাগুরার মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সেই সুরাইয়াকে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার সাভারের ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড’ সিআরপিতে চিকিৎসা নিতে আবারো ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থতার প্রথমদিকে তাকে সেখানে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতির কারণে পরবর্তিতে সেটি অব্যাহত রাখতে পারেনি তার পরিবার। সিআরপিতে সুরাইয়াকে ভর্তির খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া।
সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম জানান, ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই গুলির আঘাতে সুরাইয়ার ডান চোখটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সুরাইয়া ডান চোখে কিছু দেখতে পায় না। বা চোখের অবস্থাও ভালো না। চিকিৎসক জানিয়েছে, ডান চোখে আর দেখতে পাবে না। ডান চোখ তুলে না ফেললে বাম চোখও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া সুরাইয়া এখনো দাঁড়াতে পারে না। কেউ দু’হাতে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেও ছেড়ে দিলেই সে পড়ে যায়। সুরাইয়ার ডান পাশটিতে জোর কমে যাচ্ছে। ডান হাতে সে কাজ করতে পারে না।
সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া জানান, মাগুরা হাসপাতালে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়া তার কন্যা শিশু সুরাইয়া ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে জন্মের পর ঢাকার চিকিৎসকরা তাকে নিয়মিত সাভারে সিআরপিতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম দু’একবার সেখানে নিয়ে তাকে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু তিনি সামান্য চা দোকানি, অর্থাভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে সুরাইয়ার কোমর থেকে দুই পায়ের নিচের অংশ অকেজো হয়ে যাওয়ায় সে হাটতে পারে না। ডান হাতটিতেও শক্তি নেই। ডান চোখটিও নষ্ট হয়ে গেছে। নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এরই মধ্যে সুরাইয়া বয়স ৬ বছর পেরিয়েছে।
এ বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পারিবারিক উদ্যোগে সুরাইয়াকে মাগুরা পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু শরীরিক অক্ষমতার কারণে সে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে ঢাকার সাভারের সিআরপিতে ভর্তি করা হয়েছে। সিআরপি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ১৫ দিন পর প্রতি সপ্তাহে তাকে সিআরপিতে নিয়ে থেরাপি দিতে হবে। কিন্তু তার সে আর্থিক সামর্থ্য নেই। তবে সুরাইয়াকে সিআরপিতে ভর্তির খবর জানতে পেরে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর সোমবার বিকেলে কিছু নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন। এছাড়া তিনি আরো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান বাচ্চু ভূঁইয়া।
পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসি জয়া বলেন, ‘স্কুলে অন্য শিক্ষার্থীদের মতো সুরাইয়ার প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ রয়েছে। যে কারণে তিনি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেন। যে বিষয়টি নজরে আসে আইনজীবী ওহিদুর রহমান টিপুর। তিনি তার পূর্ব পরিচিত ও মাগুরার সন্তান সিআরপিতে কর্মরত কাজী বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে আজ সোমবার কাজী বিল্লাল হোসেনের মাধ্যমে সুরাইয়াকে সেখানে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, সুরাইয়ার পরিবার চাইলে শিশুটির চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে জেলা প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় শহরতলীর দোয়াপাড় এলাকায় অধিপত্য নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় গুলিতে বাচ্চু ভূঁইয়ার ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা বেগম, চাচা আব্দুল মোমিন গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালের সার্জন শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ সংকটাপন্ন নাজমা বেগমকে সিজারের মাধ্যমে গর্ভে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মেয়ে শিশুটিকে জন্ম দেন। গুলিটি শিশুর পিট দিয়ে ঢুকে বুকের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে ডান চোখে আঘাত করে। গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার আঘাত ছিল মারাত্মক সে কারণে ২৫ জুলাই রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ২৫ দিনের চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে সে বছর ২০ আগস্ট মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে তার মা-বাবা বাড়িতে ফিরে আসে।