বেশি সময় ডিভাইসে চোখ শিশু-কিশোরদের সর্বনাশ ঘটাবে

অধিক ইলেকট্রনিক স্ক্রিন টাইম শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন এটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যেসব শিশুর স্ক্রিন টাইম ব্যবহার কম থাকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো। এ তথ্য মিলেছে সাম্প্রতিক জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন পেপারে, যা এ সপ্তায় প্রকাশিত হয়।

গবেষকরা মে ২০২০ এবং এপ্রিল ২০২১-এর মধ্যে ২ থেকে ১৮ বছর বয়সের ২০২৬ কানাডিয়ান শিশুর ওপর একটি অনুদীর্ঘ সমীক্ষা চালান। সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ। সেই সঙ্গে আচরণের সমস্যা, বিরক্তি, হাইপার-অ্যাক্টিভিটি এবং অমনোযোগ রয়েছে গৌণ ফলাফলের তালিকায়।

অভিভাবকদের মহামারি চলাকালীন তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলো এমন—তাদের সন্তানরা কতক্ষণ টেলিভিশন দেখে বা কতটা সময় ডিজিটাল মিডিয়া, ভিডিও গেম, ভিডিও চ্যাটসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যয় করে।

গবেষণাপত্রটির সহরচয়িতা ড. ক্যাথরিন এস বিরকেন ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ইউপিআই)-কে বলেন, কম স্ক্রিন ব্যবহার করা শিশু ও যুবাদের তুলনায় অধিক স্ক্রিন ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির নানা উপসর্গের মাত্রা বেশি ছিল। যে বাচ্চা যত বেশি সময় স্ক্রিনে ব্যয় করত, তার ওপর এর প্রভাব তত বেশি পড়ত।

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস এবং কানাডিয়ান পেডিয়াট্রিক সোসাইটি প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। তবে বার্কেন গবেষণায় শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ স্ক্রিন টাইম আরেকটু বেশি ছিল।

গবেষণাপত্রে লেখকরা উল্লেখ করেন, এই ফলাফলগুলো আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গবেষণাটি মহামারির মধ্যে করা হয়। তখন কানাডায় বেশ কয়েক মাস স্কুল বন্ধ ছিল। তবে স্কুল পুনরায় খোলার পরেও বোঝা যায়, অধিক সময় স্ক্রিনে থাকা শিশু ও যুবারা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

প্রতিদিন দুই বা তিন ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা ছোট বাচ্চাদের (যাদের গড় বয়স প্রায় ছয় বছর) আচরণে সমস্যা, হাইপার-অ্যাক্টিভিটি এবং অসাবধানতার সমস্যা বেশি দেখা যায়। আর বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে ছিল বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও অমনোযোগের লক্ষণ।

গবেষণাপত্র অনুসারে উচ্চমাত্রার ভিডিও গেম খেলার সময় শিশু ও যুবারা হতাশা, বিরক্তি, অমনোযোগ ও হাইপার-অ্যাক্টিভ ছিল এবং এটি বেশ কিছু প্রাক-মহামারি গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

এই সমীক্ষা বা গবেষণার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন অধ্যয়নের নকশা (শুধু অ্যাসোসিয়েশনের জন্য পরীক্ষা করা হয়, তাই এটা বলা যায় না যে স্ক্রিন টাইম বাড়ানো আসলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে), জন-বাছাই (যেমন গবেষকরা শুধু ইউরোপীয় বংশের কানাডিয়ান শিশুদের নিয়ে গবেষণা করেছেন) এবং কারণ অধ্যয়নের আগে বেশির ভাগ শিশুর একটি মানসিক স্বাস্থ্য নির্ণয় ছিল, যা তাদের নিজস্ব মানসিক স্বাস্থ্য।

লেখকরা উপসংহারে বলেন, এই সমন্বিত সমীক্ষায় কভিড-১৯ চলাকালীন শিশু ও যুবকদের মধ্যে স্বতন্ত্র মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পর্দার ব্যবহার যুক্ত ছিল। পরামর্শ হলো, সব স্ক্রিন ব্যবহার সমান নয়। আমাদের অনুসন্ধানগুলো জনস্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলোকে জানাতে সাহায্য করতে পারে। মহামারি চলাকালীন শিশু ও যুবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের পর্দার ব্যবহার বিবেচনা করতে হবে।

এদিকে ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, সন্তানের ঘুমের ওপর কিছু বিষয়ের প্রভাব আপনাকে অবাক করবে। ওজনযুক্ত কম্বল, অন্ধকার পর্দা, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সীমিত প্রবেশাধিকার বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শয়নকক্ষ—এসব অবশ্যই সাহায্য করতে পারে শিশুর সুস্থ ও পরিপূর্ণ ঘুমের। একটি ছোট শিশুর সুস্থ ঘুমের অভ্যাসের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এবং এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে—এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পিতা-মাতা কতটা অগ্রাধিকার দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *