পরিবারের উপার্জন সংকটে লাখো শিশু ক্ষুধার্ত, বাড়ছে শিশু শ্রম
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে পরিবারের আয় হ্রাসের ফলে পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের চাপ তৈরি হওয়ায় শিশুরা ক্রমাগত নিঃসঙ্গতা অনুভব করছে, বলছে আন্তর্জাতিক শিশু কেন্দ্রিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন। পরিবারের উপার্জন সংকটে লাখো শিশু ক্ষুধার্ত এবং বাড়ছে শিশু শ্রম ও ভিক্ষাবৃত্তি। সুরক্ষা প্রাধান্য দেওয়া উচিত মনে করছে ওয়ার্ল্ড ভিশন।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, কোভিড -১৯ এর অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে শিশুর ক্ষুধা, সহিংসতা এবং দারিদ্র বৃদ্ধির যে বৈশ্বিক আশঙ্কা করা হয়েছিল তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যার কারণে এশিয়া অঞ্চলে ৮ দশমিক ৫ কোটি পরিবারের সঞ্চিত খাবার অপ্রতুল বা নেই বললেই চলে এবং ১১ কোটি শিশু ক্ষুধার্ত থেকে যাচ্ছে।
উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বলছে, পিতা-মাতার পর্যাপ্ত খাবার কেনার সামর্থ্যের অভাবে এশিয়া অঞ্চলের ৮০ লাখ শিশু ভিক্ষা বৃত্তি, শিশু শ্রম এবং বাল্য বিবাহের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন ন্যাশনাল ডিরেক্টর চন্দন গোমেজ বলেন, ‘সম্প্রতি পরিচালিত একটি র্যাপিড অ্যাসেসমেন্টে দেখা গেছে বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ ভাগ শিশু মানসিক মানসিক চাপে আছে এবং লকডাউনের প্রভাবে পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় আরো ৮৭ ভাগ শিশু উদ্বিগ্ন। শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে কেননা এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর কৌশল হিসেবে তাদের চাহিদার চেয়ে কম খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট বিষয়ক পার্টনারশিপ লিডার রবাট শু বলেন, ‘লাতিন আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়ায় এই র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা করা হয় যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এই মহামারিতে সংকটের শীর্ষে এখন শিশুরা। প্রতিটা অ্যাসেসমেন্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে উপার্জন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খাদ্য ক্রয়ের সামর্থ্যের অভাবে পরিবারগুলোর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে যা শিশুদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
এটাই স্বাভাবিক যে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলো সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়। বিশেষ করে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে থাকা দেশগুলো যারা সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন,অস্থিরতা ,বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।’
কমিউনিটি পর্যায়ে এশিয়ার ১৪ হাজার পরিবার, আফ্রিকার ২ হাজার ৪০০ এর অধিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার এবং ভেনিজুয়েলার ৩৬০ জন শরণার্থীর কাছ থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রাপ্ত তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে মহামারির প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে আশঙ্কা করেছিল তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
আউট অব টাইমস প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড ভিশন বিভিন্ন দেশের সরকার, জাতিসংঘের সংস্থাসমুহ ,দাতা গোষ্ঠী, এনজিও, বেসরকারি খাতের প্রতি বৈশ্বিক আহ্বান জানিয়েছে যেন শিশু সংবেদনশীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধি, খাদ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা সচল রাখা ,চাকরি ও জীবিকার সুরক্ষা এবং অর্ন্তভুক্তিমূলক, সহনশীল ও সবুজ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরো বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হয় ।