দেশের ১৩ ভাগ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে আক্রান্ত
বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ১৮ ভাগ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৩ ভাগ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এই আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৯২ ভাগ কোন ধরনের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেননি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’ শীর্ষক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
আগামীকাল (১০ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিস্টস (বিএপি) এর উদ্যোগে ও সাইনোভিয়া ফার্মার সহযোগিতায় এটি আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তারা জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৮ ভাগ ও শিশু-কিশোরদের ১৩ ভাগ মানসিক রোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯২ ভাগ কোন ধরনের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেননি। নগরায়ন, আর্থ সামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি, অন্যান্য শরীরবৃত্তি ও মনোসামাজিক কারণ মানসিক রোগের প্রকোবৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তারা।
এছাড়া শিশু-কিশোরের মাঝে মানসিক রোগে ১২.৬ ভাগ, শিশু-কিশোরের নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে ৫.১ ভাগ,শিশু-কিশোরের কনডাক্ট ডিজঅর্ডারে ১.৭ ভাগ, শিশু-কিশোরের মাঝে উদ্বেগাধিক্যে (জিএডি) ৪.৭ ভাগ আক্রান্ত।
অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, আমাদের চেম্বারে এখন মায়েরা বেশি আসে, তাদের সন্তানদের নিয়ে। এখন সন্তানেরা ইন্টারনেট এডেক্টিভ বিহেবিয়ার বা ইন্টারনেট ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। অভিবাবকরা বলেন সন্তানরা পড়াশোনা করে না, রাতে ঘুমায় না, তারা কথা শোনে না। আগে ব্রিলিয়ান্ট ছিল এখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়েরা নিজেদের কষ্ট লাঘব করার জন্য আমাদের কাছে নিয়ে আসে, আর বলে আমার সন্তান আগে কত ভালো ছিল এখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তো সেখান থেকে আমাদের অবজারভেশন কি ?আমাদের অবজারভেশনে হচ্ছে বাচ্চারা যারা ইন্টারনেটে বসে থাকে, রাত জেগে থাকে ইন্টারনেট এডেক্টিভ বিহেবিয়ারে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের পড়ালেখায় ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় জাতীয় একটি জরুরি অবস্থা আমি মনে করছি। আকাশ সীমা যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, আমাদের প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চারা যেসব ওয়েবসাইট ফোনে দেখতে তাতে তাদের মনে ভোগবাদী সত্ত্বা বসে যাচ্ছে। তাদের নৈতিক সত্ত্বার স্খলন হচ্ছে, তাদের নৈতিক সত্ত্বার বিকাশ হচ্ছে না। তাহলে তারা কেন ধর্ষণ করবে না ? তারা কেন মেয়েকে ভোগের বস্তু মনে করবে না, মেয়েরা কেন ছেলেদের ভোগের বস্তু মনে করবে না ? আমাদের এসব (ওয়েবসাইট) ফিল্টার করতে হবে। সন্তানদের নিয়ে বাচ্চাদের যে হাহাকার এই সমস্যা আমাদের সলভ করতে হবে। আমাদের এখন জরুরি অবস্থা চলছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনে মিডিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পরিবার এবং সবার দায়িত্ব আছে। এককভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবিরা এই ভয়াবহ অবস্থার প্রতিরোধ করতে পারবে না।
আত্মহত্যা নিয়ে মেঘলা সরকার বলেন, আমাদের এক সার্ভে রিপোর্টে দেখা যায় হাইলি সুইসাইডাল থট কিন্তু মেয়েদের মধ্যে বেশি৷ এটা মেয়েদের মধ্যে ৬ শতাংশ আর ছেলেদের ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আত্মহত্যা কিন্তু আমাদের জন্য এখন খুবই এলার্মিং বিষয়। আত্মহত্যাকে আমরা অনেক সময় জাস্টিফাই করে থাকি যে আমাদের জীবনে অনেক ক্রাইসিস চলে তাই আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে। তবে আত্মহত্যার চিন্তা বা এর প্ল্যান করা কিন্তু কোন স্বাভাবিক ঘটনা না। যখন কেউ এ ধরনের চিন্তা করে তখন কিন্তু সে স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় থাকে না। কারন আমরা যে জন্মগ্রহন করি, আমাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক প্রবনতা আমাদের জিনগতভাবেই আছে। আমরা মনে করি আমাদের জীবনের যে নানা রকমের ক্রাইসিস, নানা রকমের স্ট্রেস এগুলো মোকাবিলা করার আমাদের যে একটা ক্ষমতা ও দক্ষতা থাকে সে ক্ষমতার যখন কমতি হয় আবেগকে যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তখনই কিন্তু এধরনের বিহেভিয়ার বা চিন্তা আমাদের মধ্যে আসতে পারে।