গরমে শিশুরা আছে বিপদে
আট বছর বয়সী শিশু রোমেল দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা কমে এলেও রাতের বেলা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে বলে জানায় তারা বাবা আফজাল হোসেন। জ্বর না কমায় চিকিৎসকের কাছে যান। কিছু টেস্ট করার পরামর্শ দেন ডাক্তার। টেস্টের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানান টাইফয়েড হয়েছে।
এদিকে ছয় বছর বয়সী শিশু ফাতেমার গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে বাসায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন ফাতেমার চিকেন পক্স বা গুটি বসন্ত হয়েছে।
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। তাপমাত্রার পারদ শুধুই ঊর্ধ্বমুখী। বর্ষা আসার আগে আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে বিপদে আছে শিশুরা। নানারকম রোগে কাবু হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্করা। এসব রোগের মধ্যে আছে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, চিকেন পক্সের মতো রোগ। চিকিৎসকদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জুন পর্যন্ত চিকেন পক্সের প্রকোপ দেখা দেয়। ৫ থেকে ৯ বছরের শিশু এবং ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা এতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এখনও চিকেন পক্সের রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন জরুরি বিভাগে। এই ধরনের সংক্রামক রোগের চিকিৎসা এখানে পাওয়া যায়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিনই চিকেন পক্সের রোগীরা আসেন, যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের তথ্য বলছে, শিশুদের জন্য সেখানে আলাদা পাঁচটি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগে দিনে গড়ে ৩০০-এর বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র গরমে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৭০০-এর বেশি রোগী সেবা নিচ্ছ। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া, জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, জ্বর-কাশি, ডায়রিয়া, টাইফয়েড রোগী বেশি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. শাহেদুর রহমান সোহাগ জানান, গরমের কারণে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে রোগীরা আসছে। এরমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশুর সর্দি-জ্বর, হাপানিতে আক্রান্ত। জন্ডিস, টাইফয়েড ও ডায়রিয়ার রোগীও তুলনামূলক বেড়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালেও রোগীর চাপ বাড়ছে। চিকিৎসকরা জানান, দেখা গেছে প্রতি ২০ জন রোগীর মধ্যে ৬ জন টাইফয়েড, ৪ জনের জন্ডিস, ৩ জনের ফুড পয়জনিং থেকে ডায়রিয়া ও বাকিরা মৌসুমি জ্বর ও নিউমোনিয়া নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, এখনকার শিশুদের জ্বর, মাথাব্যথা, ভাইরাল জ্বর, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয় এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এসময় শিশুদের বাইরে যেতে দেওয়া অনুচিত হবে। ঘামতে দেওয়া যাবে না, বিশুদ্ধ খাবার ও পানি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, টাইফয়েড, জন্ডিস দুটিই পানিবাহিত রোগ। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মানুষের কাজকর্ম কিন্তু থেমে নাই। সবাই বাইরে যাচ্ছে। যখনি তেষ্টা পাচ্ছে দোকান বা হোটেলের পানি খাচ্ছে, খোলা খাবার খাচ্ছে। মূলত এ কারণে রোগবালাই বাড়ছে।
তিনি বলেন, এই গরমে রাস্তার খোলা খাবার, শরবত, আখর রস এগুলো খাওয়া যাবে না। পানি খেলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ফুটানো পানি খেতে। এছাড়া গরমে ঘরের খাবারও অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। সেটি খাওয়া যাবে না। একটু টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বেশি বেশি পানীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে।
প্রসঙ্গত, মে মাসের শেষ দিক থেকে শুরু হয়েছে তীব্র গরম এবং তা এখনও চলছে। দেশের ওপর দিয়ে এখন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এটি আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।
দেশব্যাপী চলমান তীব্র দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চার দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও প্রাথমিক শ্রেণি আগামী বৃহস্পতিবার (৮ জুন) পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।