‘করোনাকালে দ্বিগুণ ক্ষতি হচ্ছে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের’

সবুজ ঘাসে খালি পায়ে হাঁটতে খুব পছন্দ করতো নাবিহা। কিন্তু গত একবছর ধরে কোথাও যেতে পারেনি, সবুজ ঘাসে পা ফেলা হয়নি তার। এতে করে দিন যতই যাচ্ছে, নাবিহার আচরণ পাল্টে যেতে শুরু করেছে। আগে পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে সখ্যতা না থাকলেও মায়ের সঙ্গে খুব ভাব ছিল তার। কিন্তু সেই মাকেও এখন আর নাবিহা সহ্য করতে পারছে না। মায়ের সঙ্গে সে এখন খারাপ ব্যবহার করছে।

নাবিহার মা আশরাফুন্নেছা বলেন, ‘করোনায় কত জন শনাক্ত হলেন, কত জনের মৃত্যু হলো, সেসব খবরে আসে। গণমাধ্যমে প্রচার হয়। প্রতিটা মৃত্যুই  পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু আমাদের মতো পরিবারের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা গণমাধ্যমে আসে না। কেউ জানেও না। কেবল এই পরিবারগুলোই বুঝতে পারে যে, আমাদের বাচ্চাগুলোর কী অবস্থা হলো।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের যেসব প্রয়োজনীয় সেশন হতো, সেগুলো গত একবছর ধরে বন্ধ আছে। আর তাতে করে এসব শিশুর যে ক্ষতি হচ্ছে, সে ক্ষতি সামলে ওঠার মতো পথ নেই সামনে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, ‘মহামারির কারণে  বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। বাইরে যেতেও অনেক নিষেধাজ্ঞা। শিশুদের জন্য এটা একটা মানসিক চাপ। তাদের যে রুটিন সেটা থেকে তাদের ব্রেকাপ করে ফেলা— এটা বাচ্চাদের মধ্যে অস্থিরতা এবং আশঙ্কা তৈরি করছে যে, ভবিষ্যতে কী হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আর যারা স্বাভাবিক শিশু তাদেরকে কিছুটা বোঝালে বা কাউন্সিলিং করলে, হয়তো তাদেরকে কিছুটা বোঝানো যায়। কিন্তু অটিজম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে যোগাযোগের ক্ষেত্রটা অনেকটা ভিন্ন, যেটা তাদের খুব কাছের একজন বা দুই জন বুঝতে পারেন।’

‘সবার জন্য সেটা কঠিন। তাই এই সময়ের গুরুত্ব বা এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে মানতে হবে, সেটা চেষ্টা করা হলেও সবসময়ে সম্ভব নয়। আর অনলাইনে সেটা ভালোভাবে করা যায় না, যে কারণে অটিজম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুরা ঝুঁকিতে রয়েছে’, বলেন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান।

চলতি বছর অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য ফিজিক্যালি তেমন কিছু করা যাচ্ছে না বলে জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

মহামারিকালে এই বিশেষ শিশুদের কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিটা অনেক বেশি হয়েছে। এই শিশুদের পিছিয়ে যাবার মাত্রা অন্যান্য শিশুর চাইতে অনেক বেশি।’

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্কুল বন্ধ বা বাইরে যেতে পারছে না বলে স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষতি হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে প্যান্ডেমিকের ক্ষতিটা দ্বিগুণ হবে। কারণ, একদিকে তারা যেমন স্কুলে যেতে পারছে না, বাইরে যেতে পারছে না, তাদের জন্য যেসব প্রশিক্ষণের জায়গা ছিল, সেখানে যেতে পারছে না। পাশাপাশি বাড়িতে থেকে তাদের যে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল, সামনে এগিয়ে যাবার কথা ছিল— সেটাও ব্যাহত হচ্ছে।’

‘আর এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার তেমন কোনও সুযোগ নেই’, বলেন তিনি।

তবে এখানে দায়িত্বটা পরিবারকেই নিতে হবে জানিয়ে ডা. হেলাল  বলেন, ‘ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কোনও স্কুল বা কোনও সংস্থা দায়িত্ব নিচ্ছে না। এজন্য পরিবারকে তাদের স্কুলিং বা ট্রেনিংয়ের ভেতরে আনতে হবে। পাশাপাশি এই সময়ে একটা বিকল্প কেয়ার গিভারের ব্যবস্থা করতে হবে।’

একইসঙ্গে অন্যান্য শিশুর মতো করোনার বিষয়গুলো বলে তাদেরকে বোঝানো বা শেখানো যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গল্পের মতো করে, অভিনয়ের মতো করে, গানের মতো করে বোঝানোর কথা সারা পৃথিবীতেই বলা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924