এক বছরে ১৪ কোটি মেয়ে শিশু হারিয়েছে পৃথিবী
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কণ্যাভ্রূণ হত্যা ও জন্মের পর শিশু কন্যা হত্যার ধারা ২০১৯ সালে কেড়ে নিয়েছে ১৪ কোটিরও বেশি কন্যা শিশুর প্রাণ৷
প্রতি বছর জনসংখ্যা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ড৷ ‘অসমাপ্ত দায়িত্ব’ শিরোনামে প্রকাশিত এবারের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, অনেক বাবা-মা পুত্র সন্তান চান বলে ২০১৯ সালে ১৪ কোটিরও বেশি কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়েছে৷ কেউ কেউ জন্মের পরই মারা গেছে, অন্যদিকে কেউ কেউ আবার শিকার হয়েছেন ভ্রূণ হত্যার চলমান প্রবণতার৷ এর কারণ হিসাবে উঠে আসছে ছেলে সন্তানের প্রতি দুর্বলতার কথা৷ সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পাওয়া যাবে এই লিংকে:
শুধু শিশুকন্যা মৃত্যুই নয়, প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে বিশ্বের প্রতি ৫টি বিবাহের ১টিতে পাত্রী থাকে অপ্রাপ্তবয়েস্ক৷ কন্যা সন্তানের প্রতি প্রবল অনীহা সমাজের গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে, জানাচ্ছে এই প্রতিবেদন৷ জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, ‘‘কন্যা সন্তানের তুলনায় ছেলে সন্তানের চাহিদা এতটাই তুঙ্গে যে, তা পূরণ করতে মা-বাবারা কোনোকিছু থেকেই পিছপা হন না৷ কন্যা সন্তান জন্ম না দিতে চাওয়ার পাশাপাশি ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা সন্তানকে চরম অবহেলার দিকে ঠেলে দেওয়াও এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়৷”
এই ধরনের মানসিকতাকে জাতিসংঘ দেখছে সমাজের অন্তর্নিহিত ‘পিতৃতান্ত্রিক লিঙ্গবৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ’ হিসাবে৷
ছেলে সন্তানের প্রতি এই চরম পক্ষপাত দেশে দেশে সামাজিক গঠনে অসাম্য, অনৈতিকতা সৃষ্টি করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রে শিশুবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ করা হলেও ঠেকানো যায়নি৷ প্রতিদিন গড়ে ৩৩ হাজার অপ্রাপ্তবয়স্কের বিয়ে হয়৷ পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে গত বছর ৬৫ কোটি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হয়েছে৷
সুরাহা কোন পথে?
এর প্রতিকারের উপায় প্রসঙ্গে জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের প্রধান নাটালিয়া কানেম বলেন, শুধু আইন প্রণয়ন করে এই ধারা ঠেকানো যাবে না৷
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আরো গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে৷ সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের যে সুদূরপ্রসারী শিকড় রয়েছে তাকে উপড়ে ফেলতে হবে৷ বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভেতরের সমস্যাগুলিকে বুঝতে হবে৷ মেয়েদের ওপর এই মানসিকতার কেমন প্রভাব পড়ছে, তা সহজ করে বোঝাতে হবে মানুষকে৷”
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০৩০ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নারী ও শিশু উন্নয়ন খাতে বার্ষিক সাড়ে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৯০০ কোটি বাংলাদেশি টাকা) অর্থ বিনিয়োগ করলে ঝুঁকিতে থাকা এমন লাখো নারী-শিশুকন্যার প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে৷