“নতুন কুঁড়ি” প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিজয়ীদের মাঝে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এ সময় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রতিযোগিতা নিজেকে আবিষ্কারের এক সুযোগ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জনপ্রিয় শিশু প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’। দেশের শিশু ও কিশোরদের মেধা, প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সেই সুযোগ তৈরি করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘শিশুদের জন্য আজকের এই অর্জন তাদের জীবনের এক বিশেষ মুহূর্ত। এটি তাদের আরও এগিয়ে যেতে, নিজেদের আবিষ্কার করতে অনুপ্রাণিত করবে। এ প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্যই হল- নিজেকে আবিষ্কার করা। আজকের এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে দেশের অগণিত ঘরে। এই উৎসব শুধু উপস্থিত শিশুদের নয়, তাদের প্রতিটি পরিবারকেও আনন্দিত করবে—যারা ভালোবাসা ও প্রত্যাশা নিয়ে তাদের সন্তানদের সাফল্য দেখেছে। প্রতিটি শিশুর অর্জন—যত ছোটই হোক না কেন—একটি অনুপ্রেরণার মাইলফলক।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতা শিশুদের চরিত্র ও দৃঢ়তা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজয়ীরা যেমন উৎসাহের যোগ্য, তেমনি যারা জয়ী হতে , তারাও ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী থেকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। যারা চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে পারেনি, তারাও প্রশংসার দাবিদার। কারণ, কোনও শিশু যখন ভাবে— ‘আমি কেন না?’— তখন সেই প্রশ্নই তাকে বদলে দেয়, তাকে অনুপ্রাণিত করে ভবিষ্যতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুরা প্রশ্ন করতে শেখে, চ্যালেঞ্জ নিতে শেখে, বুঝতে শেখে যে তারা এমন কিছু করতে পারে যা অন্যরা পারে না। এভাবেই তাদের আত্মবিশ্বাস ও কল্পনাশক্তি বেড়ে ওঠে।’
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তারা এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতাকে নতুন করে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। তিনি প্রতিযোগিতাটিকে আরও বিস্তৃত করার জন্য সরকারের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। এই প্রতিযোগিতা জাতির রূপান্তরকে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে নিয়ে যাবে।’
অধ্যাপক ইউনূস প্রতিযোগিতার পরিধি আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, ফ্যাশন ডিজাইন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, লেখালেখি ও ক্রীড়া— এসব ক্ষেত্রেও এমন প্রতিযোগিতা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন প্রতিযোগিতাকে কেবল কয়েকটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখব? শিশুদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য কিংবা ব্যবসা আবিষ্কারের সুযোগ দিন। এমনকি ফ্যাশন ডিজাইন বা রান্নাও হতে পারে সৃজনশীলতার ক্ষেত্র। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত— কোনও শিশুই যেন পিছিয়ে না থাকে। প্রতিটি শিশুর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। আমাদের কাজ হলো তা আনন্দের সঙ্গে, কোনও চাপ ছাড়াই, আত্ম-আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে খুঁজে বের করা।’
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের শিশু ও তরুণদের অনুপ্রাণিত করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যেভাবে আমরা বাংলাদেশের সেরাদের মধ্যে সেরা হতে চাই, তেমনি আমরা চাই বিশ্বের সেরাদের মধ্যেও জায়গা করে নিতে।’
বক্তৃতার শেষে তিনি সকল বিজয়ী, অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক, শিক্ষক, আয়োজক এবং বিচারকমণ্ডলীর সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশের হাজারও শিশু অংশ নেয়। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, গল্প বলা, অভিনয়সহ মোট ১২টি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্ব শেষে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব।
প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের সেরা দুই বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ‘ক’ গ্রুপে টাঙ্গাইল জেলার প্রেয়সী চক্রবর্তী এবং ‘খ’ গ্রুপে সুনামগঞ্জ জেলার শুভ মিতা তালুকদার চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা প্রত্যেকে একটি ক্রেস্ট ও তিন লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *