সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ ১৪৩২।

বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের শুরু হয়েছিল পুরান ঢাকার মুসলিম মাহিফরাস সম্প্রদায়ের হাতে। খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটি র দিন হিসেবে গৃহীত। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়।

আমাদের বাংলা সনের ব্যবহার খুব কম। শহরের অনেকেই তো জানেও না বাংলা সনের দিন তারি খ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ নববর্ষের দিনটি এসে আমাদের জানান দিয়ে যায় বাংলা সন যে আছে। বাংলা সনের উৎপত্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই সন ইসলামের উত্তরাধিকার বহন করছে। হিজরি সন থেকে এর উদ্ভব বলে এমনটা হ য়েছে। ফলে এই সন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। বাংলা সনের শুরু কোথা থেকে অথবা কেনো বাংলা সন প্রবর্তন করা হলো, এইসবের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যে ১৪৩২ সনকে আমরা আমন্ত্রণ জানাতে যাচ্ছি, বরণ করতে যাচ্ছি- এর গণনা কিন্তু এক, দুই থেকে শুরু হয়নি। বাংলাদেশে প্রচলিত তিনটি সনের মধ্যে হিজরি সনই হচ্ছে প্রাচীন সন। এখানে ইসলাম প্রচার প্রথম ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে সপ্তম শতাব্দীর চল্লিশ দশকের দিকে। তখন থেকেই এখানে হিজরি সনের আগমন ঘটেছে। আর মোগল বাদশাহ আকবরের আমলে হিজরি সনকে সৌর গণনায় এনে যে সন এখানে প্রচলিত হয়েছে সেটাই বাংলা সন। বাংলা সনের প্রবর্তনের সময় ধরা হয় ১৫৫৬ সাল থেকে। প্রবক্তা ছিলেন মোগল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর।

বাংলা নববর্ষে এখন সাধারণ ছুটি থাকে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নববর্ষ উদযাপিত হয়। জাতী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই দিনটি উদযাপন করে। ফলে এটি এখন আমাদের একটি জাতীয় উৎসবের দিন। এ দিন বসে বৈশাখী মেলা। সবাই বাঙালি খাবারের আয়োজন করেন। থাকে খই মুড়ি বাতাসা ইত্যাদি। উড়ানো হয় বেলুন। বাজানো হয় পাতার বাঁশি থেকে শুরু করে নানান ধরনের বাঁশি। এখন অবশ্য পান্তা-ইলিশের চল দেখা যায় শহরে। তবে পান্তা-ইলিশ অতীতে ছিলো না। ব্যবসায়ীরা এ দিনে খোলেন হালখাতা। তবে প্রথাটা এখন সবাই অনুসরণ করে না। স্বর্ণের দোকান বা বনেদি ব্যবসায়ীরা তা ধরে রেখেছেন। হালখাতা হচ্ছে বছরের হিসাব রাখার নতুন খাতা। পুরনো হিসাব চুকিয়ে নতুন খাতা চালু হয় এ দিনে। এখন পোশাকেও নববর্ষ নতুন আমেজ নিয়ে আসে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তা অনেক আনন্দ বয়ে আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *